Post Image

মুঙ্গু


মুখবন্ধ
 
যেদিন প্রথম ছোটদের জন্য দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প লেখা শুরু হয়েছিল, সেদিন থেকে শিশুসাহিত্যের একটা নতুন দিগন্ত খুলে গেছিল। বলা বাহুল্য, এর সূচনা হয়েছিল ইয়োরোপে। এবং সে সময়ে শিশুসাহিত্যের কয়েকটি শ্রেষ্ঠ রত্ন দিনের আলোর মুখ দেখেছিল। রবার্ট লুইস স্টিভেনের ট্রেজার আইল্যান্ড, কিডন্যান্ড, জুল ভের্নের ছোটবড় সকলের জন্য লেখা নানান বিজ্ঞানভিত্তিক কিংবা অসমসাহসিক অভিযানের নানান বইয়ের গুণ আজ পর্যন্ত ম্লান হয়নি। পৃথিবীর অত্যাশ্চর্য বিস্ময়ের দিকটা চিরকালই ছোটদের মুগ্ধ করেছে। এ-ও তাদের বড় হওয়ার একটা বলিষ্ঠ দিক; অজ্ঞাতকে জানবার, দুর্গমকে জয় করবার, প্রতিকূল শক্তির সঙ্গে লড়বার, দেহ-মনের বল আহরণের প্রবল একটা দিক।
 
অনেক দিন আগেই বাংলায় এই ধরনের কিছু কিছু বই বেরিয়েছে, লেখকদের মধ্যে হেমেন্দ্রকুমার রায়ের নাম করতে হয়। তাছাড়া আরো আছেন। এই বইখানির রচয়িতা অজেয় রায় সেই জাতের লেখক, যাঁরা দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প অতিশয় সরস ও সহজ ভাবে লিখতে পেরেছেন। এর মধ্যে অনেক জ্ঞাতব্য বিষয় সংবলিত আছে। অজেয় রায় কোনো তথ্য পরিবেষণ করার আগে, সেটি নির্ভুল কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা করে নিতে যত্নবান হন। এইটি তার বিশেষত্ব। এমন কি দুটো একটা বিদেশী কথা ব্যবহার করতে হলেও, আগে শব্দগুলি সম্বন্ধে নিজে নিঃসন্দেহ হন, তারপর লেখেন। ছোটদের বইতে ভুল লিখলে চলে না।
 
 
এই ধরনের বই কোনো কোনো অভিভাবক স্রেফ রোমাঞ্চময়, নিকৃষ্ট শ্রেণীর লেখা বলে অপছন্দ করেন। তারাও এই বইখানি সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হতে পারেন, এর কাল্পনিকতা তথ্যপুষ্ট বলেই এত আকর্ষণীয়। রস ও কল্পনাশক্তিই হল সাহিত্যের প্রধান উপজীব্য। এ ছাড়া হাজার জ্ঞাতব্য তথ্যে পূর্ণ হলেও রচনা উরোয় না। ছোটরা আনন্দের সঙ্গে পাঠ করলে তবে না তাদের জন্য গল্প লেখা সার্থক হয়।
 
 
অজেয় রায়ের ছাত্র-জীবনের ও কর্ম-জীবনের পটভূমিকা হল গিয়ে শান্তিনিকেতন, কল্পনায় ভরা স্থান। তার বয়স চল্লিশের অনেক কম। ছোটদের আদর্শ লেখক তিনি।
 
লীলা মজুমদার
কলকাতা ১৫ মে, ১৯৭৫

Chapters

EiAmi.com