Post Image

মহাকাশে ব্ল্যাক হোল কেন এত রহস্যময়? (ব্ল্যাক হোল নিয়ে ১০টি অজানা তথ্য)


ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় এবং আকর্ষণীয় বস্তুগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি এমন একটি স্থান যেখানে মহাকর্ষীয় শক্তি এত বেশি যে, কোনো কিছুই এর আকর্ষণ থেকে বাঁচতে পারে না, এমনকি আলোও নয়। এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই ব্ল্যাক হোল বিজ্ঞানীদের কাছে এত কৌতূহলপূর্ণ। এই আর্টিকেলে ব্ল্যাক হোল কেন এত রহস্যময় এবং এটি সম্পর্কে ১০টি অজানা তথ্য আলোচনা করা হলো।


সূচিপত্র (Table of Contents)


১. ব্ল্যাক হোল কী?

২. ব্ল্যাক হোল এত রহস্যময় কেন?

৩. ব্ল্যাক হোল নিয়ে ১০টি অজানা তথ্য

৪. ব্ল্যাক হোলের প্রকারভেদ

৫. প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)


১. ব্ল্যাক হোল কী?


ব্ল্যাক হোল হলো মহাকাশের এমন একটি অঞ্চল, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এত প্রবল যে এর থেকে কোনো কিছুই, এমনকি আলোও, মুক্তি পেতে পারে না। এর কারণ হলো এখানে পদার্থ অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে সংকুচিত হয়ে যায়। একটি ব্ল্যাক হোলের সীমানাকে বলা হয় ইভেন্ট হরাইজন (Event Horizon)। এই সীমানা অতিক্রম করলে কোনো বস্তু আর ফিরে আসতে পারে না।


২. ব্ল্যাক হোল এত রহস্যময় কেন?


ব্ল্যাক হোলের রহস্যময়তার প্রধান কারণ হলো এটি অদৃশ্য। যেহেতু আলোও এর ভেতর থেকে বের হতে পারে না, তাই কোনো টেলিস্কোপ দিয়ে সরাসরি ব্ল্যাক হোল দেখা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোলকে মূলত এর চারপাশের বস্তুর ওপর এর প্রভাব থেকে শনাক্ত করেন। যেমন—এর আশেপাশে থাকা গ্যাস ও নক্ষত্রগুলোকে এটি তার দিকে আকর্ষণ করে এবং প্রচণ্ড গতিতে ঘোরাতে থাকে, যা থেকে এক্স-রে রশ্মি নির্গত হয়।


৩. ব্ল্যাক হোল নিয়ে ১০টি অজানা তথ্য


১. নামের উৎপত্তি: "ব্ল্যাক হোল" নামটি প্রথম ব্যবহার করেন আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার (John Wheeler) ১৯৬৭ সালে। ২. সময় ধীর হয়ে যায়: ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি গেলে সময় ধীর হয়ে যায়। এই ঘটনাকে টাইম ডাইলেশন (Time Dilation) বলা হয়। কোনো বস্তু ইভেন্ট হরাইজনের কাছে এলে তার জন্য সময় প্রায় স্থির হয়ে যায়। ৩. আয়তনে ছোট হলেও ভর বিশাল: একটি ব্ল্যাক হোল তার ভর অনুযায়ী খুবই ছোট হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সূর্যের সমান ভরের একটি ব্ল্যাক হোল মাত্র ৬ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের হতে পারে। ৪. এরা সব কিছু গিলে ফেলে না: ব্ল্যাক হোল একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা দানব নয়, যা সবকিছু গিলে ফেলে। যদি আমাদের সূর্য হঠাৎ করে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হতো, তবুও পৃথিবী তার কক্ষপথে স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে থাকত। ৫. ব্ল্যাক হোল আলোকিত হয়: ব্ল্যাক হোল কালো হলেও এর আশেপাশে থাকা গ্যাস ও ধূলিকণা প্রচণ্ড গতিতে ঘুরতে ঘুরতে এত উত্তপ্ত হয় যে, সেগুলো থেকে উজ্জ্বল এক্স-রে রশ্মি নির্গত হয়, যা দেখা সম্ভব। ৬. ব্ল্যাক হোল তৈরি হয়: ব্ল্যাক হোল তৈরি হয় যখন একটি বিশাল নক্ষত্র তার জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে নিজের ভেতর ধসে পড়ে। ৭. আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি ব্ল্যাক হোল আছে: আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল (Supermassive Black Hole) আছে, যার নাম স্যাজিটারিয়াস এ (Sagittarius A)**। ৮. হোয়াইট হোল (White Hole): ব্ল্যাক হোলের বিপরীত ধারণা হলো হোয়াইট হোল। এটি এমন একটি স্থান যেখানে কোনো কিছুই প্রবেশ করতে পারে না, তবে এর ভেতর থেকে বস্তু বের হতে পারে। এটি এখনও তাত্ত্বিক ধারণা। ৯. হকিং রেডিয়েশন: বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে ব্ল্যাক হোল থেকে খুব সামান্য পরিমাণ বিকিরণ (Radiation) নির্গত হয়, যা হকিং রেডিয়েশন নামে পরিচিত। ১০. অন্য গ্যালাক্সির জন্ম: বিজ্ঞানীরা মনে করেন, গ্যালাক্সির গঠন ও বিবর্তনে ব্ল্যাক হোল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু গবেষণা বলছে, ব্ল্যাক হোলের প্রভাব গ্যালাক্সির কেন্দ্রে নতুন নক্ষত্র তৈরির হারকে প্রভাবিত করে।


৪. ব্ল্যাক হোলের প্রকারভেদ


সাধারণত ব্ল্যাক হোলকে তার আকার ও ভর অনুযায়ী তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. নাক্ষত্রিক ব্ল্যাক হোল (Stellar Black Hole): এটি একটি বিশাল নক্ষত্রের মৃত্যুর পর তৈরি হয়। এর ভর সূর্যের ভরের চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি হতে পারে।
  2. সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল (Supermassive Black Hole): এই ধরনের ব্ল্যাক হোলের ভর সূর্যের ভরের চেয়ে কয়েক লক্ষ থেকে শত কোটি গুণ বেশি হতে পারে। প্রতিটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে এই ধরনের ব্ল্যাক হোল থাকতে পারে।
  3. মধ্যবর্তী ব্ল্যাক হোল (Intermediate-Mass Black Hole): এর ভর নাক্ষত্রিক এবং সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের মাঝামাঝি।


প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)


প্রশ্ন ১: যদি ব্ল্যাক হোল অদৃশ্য হয়, তবে বিজ্ঞানীরা কীভাবে এটি দেখতে পান?

উত্তর: বিজ্ঞানীরা সরাসরি ব্ল্যাক হোল দেখতে পান না, তবে এর আশেপাশের বস্তু এবং আলোর উপর এর প্রভাব দেখে এটি শনাক্ত করতে পারেন।

প্রশ্ন ২: পৃথিবী কি কখনো ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে?

উত্তর: না। পৃথিবী ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে না। কারণ, এর ভর একটি ব্ল্যাক হোল গঠনের জন্য যথেষ্ট নয়। শুধুমাত্র বিশাল নক্ষত্রই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হতে পারে।

প্রশ্ন ৩: ব্ল্যাক হোলে পড়লে কী হবে?

উত্তর: ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজন অতিক্রম করলে আপনি আর ফিরে আসতে পারবেন না। প্রবল মহাকর্ষীয় শক্তির কারণে আপনার শরীর পরমাণুতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে।

EiAmi.com