
আর্টিকেল: মিশন চন্দ্রযান-৩: চাঁদের মাটিতে ভারত
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO)-এর চন্দ্রযান-৩ মিশন শুধু ভারতের জন্যই নয়, সমগ্র বিশ্বের কাছেই একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ২০২৩ সালের ২৩শে আগস্ট চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার 'বিক্রম' সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে, যা ভারতকে চাঁদের এই অনাবিষ্কৃত অঞ্চলে পৌঁছানো বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই মিশনটি চাঁদের পৃষ্ঠে গবেষণা এবং এর পরিবেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
সূচিপত্র (Table of Contents)
১. চন্দ্রযান-৩ মিশনের লক্ষ্য কী ছিল?
২. কীভাবে এই মিশনটি সফল হলো?
৩. বিক্রম ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান রোভারের ভূমিকা
৪. চন্দ্রযান-৩ থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
৫. কেন দক্ষিণ মেরু এত গুরুত্বপূর্ণ?
৬. ভারতের মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ
৭. প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
১. চন্দ্রযান-৩ মিশনের লক্ষ্য কী ছিল?
চন্দ্রযান-৩ মিশনের মূল লক্ষ্য ছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি ল্যান্ডারকে সফলভাবে অবতরণ করানো এবং একটি রোভারকে চাঁদের পৃষ্ঠে চালানো। এছাড়াও, এই মিশনের আরও কিছু বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য ছিল:
- চাঁদের পৃষ্ঠের গঠন ও বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করা।
- চাঁদের মাটিতে জলের উপস্থিতি বা বরফ আছে কিনা, তা খুঁজে বের করা।
- চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, ভূ-কম্পন এবং প্লাজমা পরিবেশের ওপর গবেষণা করা।
২. কীভাবে এই মিশনটি সফল হলো?
চন্দ্রযান-৩ মিশনটি চন্দ্রযান-২ এর ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। ইসরো ল্যান্ডিং প্রক্রিয়াটিকে আরও মজবুত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছিল। ল্যান্ডারের সেন্সর এবং সফটওয়্যার উন্নত করা হয় যাতে এটি যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সফলভাবে অবতরণ করতে পারে। এই কঠোর পরিকল্পনা এবং নিরলস প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ মিশনটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
৩. বিক্রম ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান রোভারের ভূমিকা
- বিক্রম ল্যান্ডার: বিক্রমের প্রধান কাজ ছিল চন্দ্রপৃষ্ঠে নিরাপদে অবতরণ করা এবং রোভারকে অবতরণের পর চাঁদের পৃষ্ঠে নামানো। এতে চারটি পা এবং চারটি থ্রাস্টার ইঞ্জিন ছিল, যা এটিকে ধীরে ধীরে নিচে নামতে সাহায্য করেছিল।
- প্রজ্ঞান রোভার: ৬ চাকার এই ছোট্ট রোভারটি বিক্রম থেকে বেরিয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে ঘুরে বেড়ায়। এর প্রধান কাজ ছিল চাঁদের মাটিতে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করা এবং ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠানো।
৪. চন্দ্রযান-৩ থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বিক্রম ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান রোভার চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠিয়েছে:
- তাপমাত্রা পরিবর্তন: রোভারটি চাঁদের পৃষ্ঠে এবং ভূ-পৃষ্ঠের ১০ সেন্টিমিটার গভীরে তাপমাত্রার বিশাল পার্থক্য খুঁজে পেয়েছে, যা বিজ্ঞানীদের অবাক করেছে।
- রাসায়নিক উপাদান: প্রজ্ঞান রোভার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সালফার, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্রোমিয়াম এবং টাইটানিয়ামের মতো উপাদান খুঁজে পেয়েছে। এটি ভবিষ্যতের চন্দ্রাভিযানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫. কেন দক্ষিণ মেরু এত গুরুত্বপূর্ণ?
চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলটি খুবই রহস্যময় এবং দুর্গম। এখানকার কিছু অংশে সূর্যের আলো কখনো পৌঁছায় না, তাই এই স্থানগুলোতে বরফ আকারে জল থাকার সম্ভাবনা বেশি। ভবিষ্যতের চন্দ্রাভিযান, যেখানে চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে, তার জন্য জল একটি অপরিহার্য সম্পদ।
৬. ভারতের মহাকাশ গবেষণার ভবিষ্যৎ
চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্য ভারতের মহাকাশ গবেষণায় নতুন প্রেরণা জুগিয়েছে। ইসরো এখন পরবর্তী মিশন, যেমন—গগনযান (Gaganyaan) এবং আদিত্য-এল১ (Aditya-L1) নিয়ে কাজ করছে। গগনযানের লক্ষ্য হলো ভারতীয় নভোচারীদের মহাকাশে পাঠানো, আর আদিত্য-এল১ হলো সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি সোলার মিশন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
প্রশ্ন ১: চন্দ্রযান-৩ চাঁদে কতদিন ছিল?
উত্তর: চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান চাঁদের পৃষ্ঠে ১৪ পৃথিবীর দিন (অর্থাৎ একটি চান্দ্র দিন) ধরে কাজ করেছে।
প্রশ্ন ২: চন্দ্রযান-৩ মিশনে খরচ কত ছিল?
উত্তর: চন্দ্রযান-৩ মিশনের মোট খরচ ছিল প্রায় ৬১৫ কোটি রুপি, যা বিশ্বের অন্যান্য মহাকাশ মিশনের তুলনায় অনেক কম।
প্রশ্ন ৩: চন্দ্রযান-৩ কি এখনও চাঁদে আছে?
উত্তর: হ্যাঁ, বিক্রম ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান রোভার এখনও চাঁদের পৃষ্ঠে রয়েছে। তবে একটি চান্দ্র দিনের পর তাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে সূর্যের আলো পেলে তারা আবার জেগে উঠতে পারে।