১৭তম উপাখ্যান || বত্রিশ সিংহাসন || ভারতীয় লোককাহিনী
পরদিন মদনসুন্দরী নামে আর এক পুতুল বলল, ঔদার্যগুণে বিক্রমাদিত্যের সমতুল্য কেউ ছিলেন না।
— এখনও নেই।
ত্যাগই একমাত্র গুণ। বীর্য, ধৈর্য ও জ্ঞান সকলেরই থাকে কিন্তু ত্যাগগুণ অতি বিরল। রাজা বিক্রমাদিত্য এই বিরল গুণের অধিকারী ছিলেন।
একবার অন্য দেশের এক রাজার সামনে এক স্তুতিকার বিক্রমাদিত্যের গুণগান করছিল। তা শুনে রাজা ঐ স্তুতিকারের উপর ভীষণ রেগে গেলেন।
বিক্রমাদিত্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ -- তাঁর কি এমন গুণ আছে?
স্তুতিকার বলল, মহারাজ, দান, পরোপকার, সাহস, শৌর্যে তাঁর মত রাজা আর একজনও নেই। মানুষ সবচেয়ে ভালবাসে নিজের দেহকে কিন্তু রাজা বিক্রমাদিত্য তাঁর নিজের দেহকেও তুচ্ছ জ্ঞান করেন।
এই কথা শুনে রাজা বললেন, বিক্রমাদিত্যের মত আমিও পরোপকারে জীবন উৎসর্গ করব। তিনি এক যোগীকে বললেন, পরোপকার করার জন্য রোজ যাতে নতুন নতুন বস্তু পাওয়া যায় তার উপায় বলুন।
যোগী বললেন, সেরকম কোন উপায় আমার জানা নেই। তবে অমাবস্যার রাতে চৌষট্টি যোগিনীচক্রের পূজা করুন। পূর্ণাহুতির জন্য নিজ দেহ আগুনে আহুতি দিতে হবে।
যোগীর পরামর্শ মত রাজাও ঐরূপ অনুষ্ঠান করলেন। যোগিনীচক্র প্রসন্ন হয়ে রাজাকে নতুন শরীর দান করে বললেন, রাজন, বর প্রার্থনা কর।
রাজা বললেন, যদি আমার উপর প্রসন্ন হয়ে থাকেন তবে আমার প্রাসাদে যে সাতটি মহাকলস আছে তা প্রতিদিন সুবর্ণপূর্ণ করুন।
যোগিনীচক্র বললেন, যদি তিন মাস আগুনে তোমার দেহ আহুতি দিতে পার তবে আমরা তোমার প্রার্থনা পূর্ণ করব।
রাজা এই প্রস্তাবে সম্মত হয়ে যথাবিহিত অনুষ্ঠান করে প্রতিদিন আগুনে নিজ দেহ আতুতি দিতে লাগলেন।
রাজা বিক্রমাদিত্য এই ঘটনার কথা শুনে সেই স্থানে উপস্থিত হয়ে পূর্ণাহুতির সময় স্বয়ং আগুনে ঝাঁপ দিলেন।
তখন যোগিনীচক্র তাঁকে আবার জীবিত করে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে? তোমার দেহত্যাগের প্রয়োজন কি?
বিক্রমাদিত্য উত্তর দিলেন, পরোপকারের জন্য আমি এ দেহ আগুনে আহুতি দিচ্ছি।
যোগিনীচক্র বললেন, তোমার কথায় আমরা প্রসন্ন হয়েছি, তুমি বর প্রার্থনা কর।
বিক্রমাদিত্য বললেন, যদি আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে থাকেন তবে এই রাজা প্রতিদিন আহুতির জন্য যে কষ্ট পাচ্ছেন তা দূর করুন এবং এর প্রাসাদে যে সাতটি মহাকলস আছে তা সুবর্ণপূর্ণ করুন।
তারা ‘তথাস্তু বলে চলে গেলেন। রাজা বিক্রমাদিত্যও নিজ নগরে ফিরে এলেন। এরপর পুতুল মহারাজকে বললে, আপনার যদি এরকম পরোপকারের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করার মত গুণ থাকে তবে সিংহাসনে বসুন।
ভোজরাজ সরে দাঁড়ালেন।