বুদ্ধ অথবা কার্ল মার্কস – ড. বি. আর. আম্বেদকর

 
ভূমিকা
কার্ল মার্কস এবং বুদ্ধের ভেতর তুলনা করাটাকে একটা পরিহাসের মতো শোনাতে পারে। এতে অবাক হবার কিছু নেই। মার্কস এবং বুদ্ধের জন্মের সময়ের ভেতরের ব্যবধান ২৩৮১ বছর। বুদ্ধ জন্মেছিলেন ৫৬৩ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে এবং কার্ল মার্কস জন্মেছিলেন ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। কার্ল মার্কসকে এক নতুন আদর্শ-রাজনীতির স্থপতি, একটি নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্মদাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে বুদ্ধকে দেখা হয় একটি ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে, যাঁর রাজনীতি বা অর্থনীতির সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। ‘বুদ্ধ অথবা কার্ল মার্কস’ শিরোনামের এই প্রবন্ধে সময়ের দীর্ঘ ব্যবধানে জন্মানো ও চিন্তার ক্ষেত্রে প্রচণ্ড ভিন্নতাধারী দু’জন মানুষের তুলনা করা হয়েছে বলে আপাতদৃষ্টে এই প্রতিতুলনাকে বেশ উদ্ভট বা বেখাপ্পা বলেও মনে হতে পারে। মার্কসবাদীরা এই ভাবনাকে লক্ষ্য করে হাসতেই পারেন এবং মার্কস ও বুদ্ধকে একই স্তরে নিয়ে আলোচনা করাকে বিদ্রুপও করতে পারেন। মার্কস এত আধুনিক আর বুদ্ধ এত প্রাচীন! মার্কসবাদীরা বলতেই পারেন যে তাঁদের গুরুর সাথে তুলনা করলে বুদ্ধ রীতিমতো প্রাগৈতিহাসিক। এই দুই ব্যক্তির ভেতর কীভাবেই বা তুলনা হতে পারে? বুদ্ধর কাছ থেকে একজন মার্কসবাদীর শেখারই বা কি আছে? বুদ্ধ মার্কসকে কী শেখাতে পারেন? এত সব কথার পরও দু’জনের ভেতর একটি তুলনা কিন্তু খুবই আকর্ষণীয় এবং শিক্ষামূলক, নির্দেশনাপূর্ণ হতে পারে। এই দুই মনীষীকেই পাঠের পর এবং দু’জনের আদর্শেই আগ্রহ থাকার কারণে এঁদের দু’জনের একটি প্রতিতুলনা রচনা করাটা আমার উপর যেন সজোরে চেপে বসেছে। মার্কসবাদীরা যদি তাঁদের সব কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলেন এবং বুদ্ধকে পাঠ করে অনুধাবনে সক্ষম হন যে তিনি ঠিক কীসের পক্ষে দাঁড়াতে চেয়েছেন, তাহলে তাঁরা তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবেন বলে আমি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।
 
তবে এতটা প্রত্যাশা করাও বোকামি হবে যে, বুদ্ধকে এতদিন যারা পরিহাস করেছেন তাঁরা হুট করে তাঁকে উপাসনা করা শুরু করবেন। তবে এটুকু বলা যেতেই পারে যে, এই প্রবন্ধ পড়ে অন্তত তাঁরা (মার্কসবাদীরা) এটুকু অনুধাবনে সক্ষম হবেন যে, বুদ্ধের শিক্ষায় এমন কিছু আছে যা উপেক্ষণীয় নয়।
 

Chapters