রহু চণ্ডালের হাড়

শারিবার যখন বছর বারো বয়স, তখন নানি লুবিনির সঙ্গে তার সখ্য গভীরতর হয়। কেননা তখন শারিবা সব বুঝতে শিখেছে, নিজের এবং নিজের লোকজনের চতুষ্পার্শ দেখতে শিখেছে। আর সেই সঙ্গে নানির কাছে শুনে শুনে বর্তমানের সাথে অতীতের যোগসূত্র রচনা করার চেষ্টাও সে করতে পারে তার অপুষ্ট বুদ্ধিতে।

রাধারমণ

যে-দেশে একটি ব্রহ্মাস্ত্রের দ্বারা অপর ব্রহ্মাস্ত্রকে প্রশমিত করা হয়, সেই দেশ জুড়ে কোথাও আগামী দ্বাদশ বর্ষ পর্যন্ত বৃষ্টি হবে না। সৌপ্তিকপর্বের শেষে মহর্ষি ব্যাসদেব অশ্বত্থামাকে এই কথাটুকু স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। শিবিরের মশালগুলি এখনও প্রজ্বলিত। নিকষ অন্ধকারের তীব্রতা কাটিয়ে ভোর হবে একটু পরেই।

বুড়ো আংলা

উত্তর থেকে বড়নদী দেখানে ব্রহ্মপুত্রের জলে এসে মিলেছে ঠিক সেই বাঁকের মুখেই কতকালের পুরানো ডিমরুয়ার আসামী রাজা আড়িমাওয়ের নাটবাড়ি। নাটবাড়ির নিচেই নদী মজে গিয়ে মস্ত চর পড়েছে। এত কাল থেকে হাড়গিলে পাখিরা এই চর দখল করে আছে যে, ক্রমে চরটার নামই হয়ে গেছে হাড়গিলার চর।

খোয়াবনামা (আনন্দ পুরস্কারপ্রাপ্ত)

পায়ের পাতা কাদায় একটুখানি গেঁথে যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গলার রগ টানটান করে যতোটা পারে উঁচুতে তাকিয়ে গাঢ় ছাই রঙের মেঘ তাড়াতে তমিজের বাপ কালো কুচকুচে হাত দুটো নাড়ছিলো, ঐ জায়গাটা ভালো করে খেয়াল করা দরকার। অনেকদিন আগে, তখন তমিজের বাপ তো তমিজের বাপ, তার বাপেরও জন্ম হয় নি,

চিলেকোঠার সেপাই

‘তোমার রঞ্জু পড়ি রইলো কোন বিদেশ বিভূঁয়ে, একবার চোখের দ্যাখাটাও দেখতি পাল্লে না গো!’ কুয়োতলায় দাঁড়িয়ে ওসমান একটার পর একটা লেবুপাতা ছেঁড়ে আর মায়ের বিলাম শোনে। ৩টে আঙুলে লেবুপাতা চটকাটে চটকাতে উঠানের দিকে এগিয়ে গেলে কে যেন তাকে দেখে ফেলে, ‘ওরে! রঞ্জুকে এট্টু কাঁধ দিতি দে!’ লোকটা কে?

মৃত্যুক্ষুধা (১৯৩০)

পুতুল-খেলার কৃষ্ণনগর। যেন কোন খেয়ালি খেলাশেষের ভাঙা খেলাঘর। খোকার চলে-যাওয়া পথের পানে জননির মতো চেয়ে আছে – খোকার খেলার পুতুল সামনে নিয়ে। এরই একটেরে চাঁদ-সড়ক। একটা গোপন ব্যথার মতো করে গাছ-পালার আড়াল টেনে রাখা।

বাঁধনহারা (১৯২৭)

আমি নাকি মনের কথা খুলে বলিনে বলে তুমি খুব অভিমান করেছ? আর তাই এতদিন চিঠি-পত্তর লেখনি? মনে থাকে যেন, আমি এই সুদূর সিন্ধুদেশে আরব-সিন্ধুর তীরে পড়ে থাকলেও আমার কোনো কথা জানতে বাকি থাকে না! সমঝে চোলো, তারহীন বার্তাবহ আমার হাতে!

কুহেলিকা (১৯৩১)

নারী লইয়া আলোচনা চলিতেছিল। … তরুণ কবি হারুণ তাহার হরিণ-চোখ তুলিয়া কপোত-কূজনের মতো মিষ্টি করিয়া বলিল, ‘নারী কুহেলিকা’। যেস্থানে আলোচনা চলিতেছিল, তাহা আসলে ‘মেস’ হইলেও, হইয়া দাঁড়াইয়াছে একটি পুরোমাত্রায় আড্ডা। দুই তিনটি চতুষ্পায়া জুড়িয়া বসিয়া প্রায় বিশ বাইশ জন তরুণ।

অনন্ত দ্রাঘিমা

খাটো ধুতি হাঁটুর উপর চড়ানো, চুনারাম বাঁধের উপর উঠে এসে পিছন ফিরে তাকাল। যার হড়বড়িয়ে চনমনে ফড়িংয়ের মতো উড়ে বেড়ানোর কথা সেই রঘুনাথ হাঁপু ধরা দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে চুনারামের দিকে। আজকালকার ছেলেপুলেদের গায়ে তেমন জোর নেই, বালিছাতুর চেয়ে পলকা ওদের গতর, চুনারাম মোটা ঠোঁটে হাসি ছড়িয়ে কিছুটা নেমে এসে হাত বাড়িয়ে দিল, ধর দাদু, উঠে আয়। হা-দেখ, বেলা কেমন বাড়ছে।

ভাবীকালের একটি গল্প – এইচ জি ওয়েলস

মহারানি ভিক্টোরিয়ার আমলের খাঁটি ইংরেজ মি. মরিস অতিশয় সজ্জন পুরুষ। সচ্ছল অবস্থা। টাইমস দৈনিক পড়েন রোজ। ফি-হপ্তায় গির্জায় যান। দুপায়ে যারা দাঁড়াতে পারেনি, তাদেরকে তাচ্ছিল্যের চোখে দেখেন। নিয়মমতো চুল কাটেন। দানধ্যান করেন। জামাকাপড়ও পরিচ্ছন্ন। স্মার্ট। তৃপ্ত। সুখী। আদর্শ পুরুষ।