৮ম উপাখ্যান || বত্রিশ সিংহাসন || ভারতীয় লোককাহিনী

পরদিন ভোজরাজ আবার সিংহাসনে বসতে গেলে অষ্টম পুতুল তাঁকে বললো, মহারাজ, আমার নাম লাবণ্যবতী, আমার কথা আগে শুনুন, তারপর সিংহাসনে বসবেন। রাজা বিক্রমাদিত্য নানা কারণে প্রসিদ্ধ ও মানা ঔদার্যগুণে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তিনি চরদের কাছ থেকে নানা কৌতুকপ্রদ ঘটনা জানতে পারতেন। এ কথা সকলেই জানে— পশুরা গন্ধের মাধ্যমে, ব্রাহ্মণেরা বেদের মাধ্যমে, রাজারা চরের মাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষ তাদের দুটি চোখের মাধ্যমে সবকিছু জানতে পারে।

এইভাবে রাজা বিক্রমাদিত্য রাজ্যশাসন করছিলেন। একবার চরেরা রাজ্য পরিভ্রমণ শেষ করে রাজার কাছে উপস্থিত হয়ে বললো, মহারাজ, কাশ্মীর রাজ্যে এক ধনবান বণিক বাস করে। সে পাঁচ ক্রোশ লম্বা একটি পুকুর কাটিয়েছে। সেই পুকুরের মধ্যে লক্ষ্মীনারায়ণের শয়নগৃহ নির্মাল করিয়েছে। কিন্তু জল উঠছে না, পুকুরে একবিন্দু জল নেই। তখন সেই বণিক জলের জন্য ব্রাহ্মণদের দিয়ে জপ, পূজা, হোম প্রভৃতি অনেক কিছু করাল, কিন্তু কিছুতেই জল উঠল না। তখন বণিক দুঃখে ভেঙে পড়ে পুকুরের পাড়ে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগল-- হায়, এত চেষ্টাতেও জল উঠল না, আমার সমস্ত শ্রম বিফল হল।

বণিক খুবই চিন্তিত মনে বসে থাকে। একদিন দৈববাণী হল--হে বণিকপুত্র, বত্রিশটি শুভ লক্ষণধারী কোন পুরুষের রক্তে যেদিন পুকুরের মাটি ভিজবে সেইদিন নির্মল জলে পুকুর ভরে যাবে। এ ছাড়া জল পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

এই দৈববাণী শুনে বণিক সেই পুকুরের পাড়ে অন্নছত্র খুললেন। প্রতিদিন বহু লোক সেই ছত্রে এসে আহার করতে লাগল। এই ছত্রের কাজের জন্য যারা নিযুক্ত হয়েছিল তারা ঐ সব উপস্থিত লোকদের সম্মুখে বলত, যে তার নিজের রক্ত দিয়ে এই পুকুরের মাটি ভেজাবে তাকে একশত কলস সুবর্ণ মুদ্রা দেওয়া হবে। সকলেই এই ঘোষণা মনযোগ দিয়ে শুনত কিন্তু কেউ রাজি হত না।

এই ঘোষণার কথা শুনে রাজা বিক্রমাদিত্য সেখানে এসে উপস্থিত হলেন।

তারপর বিষ্ণুমন্দিরে গিয়ে ভক্তিসহকারে পূজা করে বললেন, হে জলদেবতা, তুমি যে বত্রিশ লক্ষণযুক্ত পুরুষের রক্ত চেয়েছ, আমিই সেই, আমার রক্ত পান করে এই পুকুর জলে পরিপূর্ণ কর। এই কথা বলে রাজা খড়্গ তুলে নিয়ে যেমনি কণ্ঠচ্ছেদ করতে উদ্যত হয়েছেন অমনি দেবতা খড়্গখানা ধরে ফেলে বললেন, হে বীর, তোমার বীরত্ব এবং পরোপকারব্রত দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি, তুমি আমার কাছে বর প্রার্থনা কর ।

রাজা বললেন, হে দেবী, যদি আমার প্রতি প্রসন্ন হয়েছ তবে এই পুকুর জলে পরিপূর্ণ করে দাও । সঙ্গে সঙ্গে পুকুর জলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। রাজা খুশি হয়ে নিজের রাজধানীতে ফিরে এলেন।

পুতুল ভোজরাজকে বললো, হে রাজন, আপনার মধ্যে যদি এই রকম ঔদার্য ও পরোপকারিতা থাকে তবে এই সিংহাসনে বসুন।

ভোজরাজ সরে দাঁড়ালেন ।

Chapters